নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে বর্তমান সরকার এ খাতে বিনিয়োগ সহায়ক নীতি প্রণয়ন করছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
রবিবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ নীতিমালা ও মিথেন ব্যবস্থাপনা কাঠামো প্রণয়ন সংক্রান্ত উদ্বোধনী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর যৌথভাবে এ কর্মশালা আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নীতি অনেক সহায়ক। এ খাতের খামারিদের জ্ঞান ও পরিষেবায় অংশগ্রহণ আরও জোরদার করতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) নীতি সহায়তা প্রদান ও নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্প থেকে খামারিদের সংগঠিত করে প্রডিউসার গ্রুপ গঠন এবং তাদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করে আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও খামারি মাঠ স্কুল পরিচালনার মাধ্যমে এলডিডিপি খামারিদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলছে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এ দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন হয়েছে। প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের প্রাণিসম্পদের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এফএও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শ ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের কিছু সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সব ধরণের শর্ত পূরণ করে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল বিশ্বে পদার্পণ, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন, বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ডেল্টা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরবর্তী ১০০ বছরের জন্য দূরদর্শী পরিকল্পনা ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করেছেন। কিভাবে একটি দেশ পরিচালিত হবে, কিভাবে সে দেশের জনগণ কাজ করবে, কিভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হবে, কিভাবে অন্যান্য দেশের সাথে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা যাবে, তার সবকিছু এ পরিকল্পনায় রয়েছে।
মন্ত্রী আরো যোগ করেন, উন্নত, উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশের জন্য নয় বরং সবার জন্যই আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। অন্যথায় শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধি বিশ্বের মানুষের জন্য ন্যায্যতারভিত্তিতে বন্টন করা যাবে না। রাষ্ট্রীয় সীমানা আমাদের আলাদা পরিচয় দিতে পারলেও আকাশ, পানি, সমুদ্র, জলবায়ু আমরা আলাদা করতে পারিনা। এজন্য সমগ্র বিশ্বকে একসাথে কাজ করতে হবে। বিশ্বের বঞ্চিত, অনুন্নত, দরিদ্র দেশসমূহের প্রতি বিশ্বব্যাংক, এফএও এবং অন্যান্য সংস্থাসমূহের বিশেষ নজর দিতে হবে। পাশাপাশি যারা অনুন্নত, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং যারা জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার তাদের জন্যও আলাদা দৃষ্টি দিতে হবে। বিশেষ করে তাদের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এমদাদুল হক তালুকদারের সভাপতিত্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কৃষি অর্থনীতিবিদ আমাদু বা এবং এফএও’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি আরনড হ্যামলিয়ারস । স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এফএও, এলডিডিপি টিম লিডার ড. জুলিয়াস মুসেমি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।