নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ)। আইনটিকে পক্ষপাৎদুষ্ট, নজিরবিহীন, বিতর্কিত, দেশবিরোধী ও অপ্রয়োজনীয় উল্লেখ করেছেন বিভিএ নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দের অভিযোগ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদায়ী সচিব একজন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েট হওয়ার কারণে তিনি অবসর গ্রহণের ঠিক পূর্ব মূহুর্তে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে রাষ্ট্রের সকল রীতিনীতি ভঙ্গ করে বর্ণিত বিতর্কিত বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩ প্রণয়নের হীণ উদ্দেশ্য গ্রহণ করেছেন।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উক্ত দাবী এবং অভিযোগ করেন উপস্থিত বক্তাগণ। সংবাদ সম্মেলনে বিভিএ সভাপতি ডা. এস.এম. নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল, ন্যাশনাল ভেটেরিনারি ডীন কাউন্সিল, বিসিএস লাইভষ্টক এসোসিয়েশন, দি ভেট এক্সিকিউটিভ, বঙ্গবন্ধু ভেটেরিনারি পরিষদ ও বাংলাদেশ ভেটেরিনারি ছাত্র ফেডারেশন এর নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিএ এর পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা। তিনি বলেন, সাধারণত যে কোন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারগণের সাথে ব্যাপকভাবে মতবিনিময় ও আলোচনাক্রমে আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। অত:পর মন্ত্রণালয়ে অধিকতর যাচাই বাচাইয়ের জন্য একাধিক আভ্যন্তরিণ সভা হয়ে থাকে। দূর্ভাগ্যবশত: সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩ অংশীজনের সাথে মত বিনিময় ছাড়া সরকারের স্বীকৃত সংস্থা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি করে কঠোর গোপনীয়ভাবে বর্ণিত আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন নামে কোন আইনের অস্তিত্ব পৃথিবীর কোন দেশে নেই উল্লেখ করে বিভিএ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নতুন করে এ সংক্রান্ত কোন আইন প্রণয়ন নি:সন্দেহে বিভ্রান্তিকর ও জনস্বার্থবিরোধী। তদুপরি কি উদ্দেশ্যে কার স্বার্থে বর্ণিত বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩ প্রণীত হতে যাচ্ছে তার ব্যাখা সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও জনগণের জানা প্রয়োজন।
ড. মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদায়ী সচিব একজন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েট হওয়ার কারণে তিনি অবসর গ্রহণের ঠিক পূর্ব মূহুর্তে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে রাষ্ট্রের সকল রীতিনীতি ভঙ্গ করে বর্ণিত বিতর্কিত বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩ প্রণয়নের হীণ উদ্দেশ্য গ্রহণ করেন। আমরা তাঁর এ হীণ উদ্যোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, দু’ধরনের গ্র্যাজুয়েটগণ এর মধ্যের বিরোধ মীমাংসার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন থাকার পরও অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রির সচিব ড. নাহিদ রশিদ তাঁর ভেনেটি ব্যাগ থেকে চক্ষুলজ্জা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন-২০১৯ এর কার্বন কপি বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩ মন্ত্রণালয়ের সভায় উপস্থাপন পূর্বক আইন প্রণয়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বর্নিত গ্র্যাজুয়েটগণের মধ্যের সংঘাত ও বিরোধ আরও উস্কে দিলেন। এতে বাঁধাগ্রস্থ হবে প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন, ক্ষতিগ্রস্থ হবে জনগণ। কাজেই আমরা অবিলম্বে দেশবিরোধী ও অপ্রয়োজনীয় বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সাইন্সেস ইউনিভার্সিটি এর সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, এনিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল নামে কোন আইন সারা পৃথিবীতে নাই।
“প্র্যাকটিস বিষয়টা কি? যে আপনাকে একটা চিকিৎসাশাস্ত্রে সুযোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে, যাকে বলা হয় পোশা। পশুপালনতো কোন পেশা নয়, পশুপালন আমজনতার পেশা, সকলের পেশা, এখানে এনিমেল হাজবেন্ড্রি প্র্যাকটিশনার বলতে কি বুঝায়? এটাতো পৃথিবীতে কোথাও নাই। এনিমেল হাজবেন্ড্রি গ্রাজুয়েট হিসেবে যদি থাকতে চায় সেটি ভিন্ন কথা”- বলেন অধ্যাপক নীতিশ চন্দ্র ।
অধ্যাপক নীতিশ চন্দ্র আরো বলেন, ভেটেরিনারি ও এনিমেল হাজবেন্ড্রি গ্রাজুয়েটদের মধ্যে এক ধরনের বিবেধ আছে উল্লেখ করে অধ্যাপক নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, এই কারণে অতি উৎসাহী হয়ে, হঠাৎ করে মনে হলো একটি আইন দ্বারা তার (এনিমেল হাজবেন্ড্রি) একটি সুরক্ষা দেয়া দরকার, যার কোন কান্ট্রি লেভেলে কোন ধরনের ইমপ্লিকেশন নাই। একজন নন প্র্যাকটিশনার, যে এই শিক্ষায় প্র্যাকটিস করে নাই, যে ধরনের এই সার্টিফিকেট পায় নাই, যে এই ধরনের কোড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না, সেও দেখা যাবে এই প্র্যাকটিস করবে। প্র্যাকটিস মানে চিকিৎসা করা, এই এখতিয়ারতো তার নাই, এ এখতিয়ার সে কোথায় পেলো? এনিমেল হাজবেন্ড্রির বাংলা অর্থ হলো-পশুপালন। পশুপালন সবাই করে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ডিসেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সভায় ‘বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩’ আইনটি প্রণয়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপর থেকেই সারাদেশের ভেটেনারিয়ানদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।