ফারুক রহমান (সাতক্ষীরা) : চোখ যেদিকে যায় তাকালেই শুধু পানি আর পানি বিস্তৃত জলভূমি। পানিতে থৈ থৈ করলে ও ঋতু বৈচিত্র্য আর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, লবণাক্ততা, লোনা পানির চিড়ি চাষ, জলাবদ্ধতা এসব পরিবর্তনের ফলে এই এলাকায় এখন দেখা যায় নিচে পানিতে মাছ, ডাঙায় আইল/বেড়িবাঁধে বিস্তীর্ণ সবজি চাষ হচ্ছে। যদিও এই বিলে এক সময় সোনালি ধানের গন্ধ বের হত। এই সাতক্ষীরার তালা ও আশাশুনি উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
এই এলাকার ফসলের বিলে এক সময় ধানের সোনালি রাশি মিলতো সেই ফসলের জমিতে সোনা সাদা খ্যাত চিংড়ি চাষ হলেও অন্য সময় । কোথায় ও কোথায় এক সিজন ধান হলে ও অন্য সিজন দখল করে মাছ চাষ করতে বাধ্য হতে হয়। সেই ঘেরে চাষ করা হয় সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি। চিড়ির জন্য সাতক্ষীরা বিখ্যাত।
তবে এখন শুধু ধান, চিংড়ি নয়, ঘেরের বাঁধে চাষ হচ্ছে সবজি ৷ চারদিকে থৈ থৈ জলরাশির মধ্যে এক খন্ড সবুজের সমারহ যেন মন ভরিয়ে দেয়। যেখানে আগে সবুজ শ্যামল চিরচেনার রূপ দেখা যেত। কালের পরিক্রমায় সেটা হারিয়ে গেলে ও, মাছ চাষিরা বেড়িবাঁধের উপরে সবজি চাষে ধরে রেখেছে। থৈ থৈ পানির মাঝে আবার ভরে উঠছে সবুজ শাকসবজিতে। পানির সাথে সাথে দেখা মিলছে সবুজে ভরা নানান ফলমূলেরও।
উপজেলার দক্ষিণের জনপদের যতদূর চোখ যায় পানির সাথে দেখা মেলে লাউ, শিম, বরবুটি, ক্ষিরা, ধন্দল, ভেন্ডি, মিষ্টি কুমড়া আরো কত কিছু। সবুজের সমারোহে এক খন্ড জলরাশিতে সূর্যের কিরণে যেন চিকচিক করছে পুরো ঘের।
সরজমিনে রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) তালা ও পাশ্ববর্তী আশাশুনি উপজেলার কলাগাছি, রাজাপুর, মহিষাডাঙ্গা, দাঁতপুর এলাকার ফসলের মাঠে এই দৃশ্য দেখা গেছে।
কথা হয় তালা উপজেলার দাঁতপুর এলাকার মঙ্গল সরকারের সাথে। তিনি জানান, লেখাপড়া শেষ করে চাকরি না পেয়ে শুরু করেন মাছ চাষ। ঘেরে মাছ আর বেড়ি/আইলে সবজি একসাথে দুইরকম চাষ কিভাবে করলেন এ এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঘেরে বিনিয়োগ করার একটা বড় টাকা ঘেরের বেড়িবাধ/আইল তৈরি খরচ হয়ে যায়। এক সময় ভাবলাম আইলটি ফেলে না রেখে এখানে কিছু চাষ করি। এই বর্ষার সময় ঘেরের পানি মিষ্টি থাকে তাকে। এই সময় সবজির বীজ রোপণ করি। তারপর দেখা যায় সবজি থেকে ভালো একটা টাকা লাভ পাচ্ছি। সেখান থেকে মাছের সাথে সাথে ঘেরের আইলে বিভিন্ন জাতের সবজির চাষ করি এবং সেখান থেকে ভালো অঙ্কের একটা টাকা পায় মাছের পাশাপাশি।
তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের অলোক মন্ডল ব্যবসার পাশাপাশি চাষ করেন মাছও। সে একইভাবে ঘেরের ভেড়িতে সবজি চাষ করেন। তিনি বলেন, জোয়ারের পানি আর বৃষ্টির পানির চাপে ঘেরের বেড়িবাধ ডুবে যায়। এর ফলে সবজি চারা মারা যায়। এতে লোকসান হয়। যেভাবে চারাগুলোতে ফলন আসছিলো এমন থাকলে আমি দেড় লাখ টাকা লাভ হতো। বেশি টাকা আয় করতে পারতাম। কিন্তু অতি বৃষ্টির পানিতে আমার ক্ষতি হয়ে গেল।
আশাশুনি উপজেলার খরিয়াটি গ্রামের আব্দুর রহিম মোড়ল বলেন, তিনি চার বিঘার জমিতে ঘের করেছেন। গত দুই বছর ধরে ঘরের আইলে সবজি চাষ করছেন। পাশাপাশি ভেড়া পালন করছেন। এতে তার মাছ চাষে লাভ কম হলেও সবজিতে পুষিয়ে যাচ্ছে।
এসব এলাকার নয়ন ঠাকুর, বিকাশ ঘোষ, রহিম গাজী, আয়নাল সরদার, মুকুন্দ সরকার বিভিন্ন সময়ে মাছ চাষে লোকসানের শিকার হয়েছে। গত তিন বছর তারা ঘেরের আইলে সবজি চাষ করে স্বচ্ছলতার মুখ দেখছেন।
কয়েকজন কৃষক বলেন, এ বছর বাম্পার ফলন হতো। কিন্তু ঘেরের ভেড়িতে পানি উঠায় সব শেষ হয়েছে। একদিকে শ, সবজি নষ্ট আবার অন্যদিকে ভেড়ির উপরে পানি উঠায় মাছ ও ভেসে গেছে। যেখানে দুই দিকে ভালো একটা লাভ পাওযা যেত সেখানে লসের স্বীকার আমরা। হঠাৎ পানির চাপে আমাদের সব ডুবে গিয়ে সব নষ্ট করে দিয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা সরকারের মৎস্য ও কৃষি বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।