মঙ্গলবার , অক্টোবর ২২ ২০২৪

ডেইরি-ক্যাটল সেক্টরে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশংকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক: সঠিক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে আগামীর প্রস্তুতি গ্রহণ না করলে দেশের ডেইরি-ক্যাটল সেক্টরে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশংকা করেছেন বাংলাদেশ ডেইরি এন্ড ফ্যাটেনিং ফার্মারস এসোসিয়েশন (ডিএফএফএ)। তারা জানান, যে ভারতে সরকারি বেসরকারি সব ব্রিডিং স্টেশনে সেক্সিং টেকনোলজি স্থাপিত হচ্ছে, যার মাধ্যমে শুধুমাত্র বকনা বাছুর হবে। ফলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতের স্থানীয় ষাড় বাছুরের উৎপাদন অন্তত ৩০% কমে যাবে। এতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ভারত থেকে আর ষাড় বা ষাড় বাছুর আসবে না।

আজ রবিবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব আশংকার কথা জানান সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ডেইরি এন্ড ফ্যাটেনিং ফার্মারস এসোসিয়েশন (ডিএফএফএ) এর নবনির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন। এছাড়াও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয়া হয়। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ভুট্টু, মালিক মো. ওমর সহ কার্যর্করী কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ।

নেতৃবৃন্দের অভিযোগ দেশের ডেইরি-ক্যাটল সম্পর্কে সরকারি পরিসংখ্যান ভুল। দেশ মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা হলেও ভারতীয় বর্ডার কোন কারণে বন্ধ থাকলে দেশে মাংসের দাম কেজিতে প্রায় ২০০ টাকা বেড়ে যায়। তারা বলেন, ইউরোপ থেকে ভর্তুকি পাওয়া গুড়া দুধ ও ভারত থেকে বর্ডার দিয়ে আসা কিছুসংখ্যক গরুর কারণে ক্রেতারা হয়তো এখনো দুধ ও মাংস খেতে পারছে। কিন্তু খামারিরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। প্রতি বছর খামারের সংখা কমছে এবং একই সাথে দুধ ও মাংস উতপাদন কমছে।

সংবাদ সম্মেলনে আক্ষেপ করে বলা হয়, আমরা খামারীরা দেশের অর্থনৈতিক খাতে অবদান রেখে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের কথা কেউ ভাবে না! ইউরোপ-আমেরিক, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও দুধ ডেইরি খামারিদের ভর্তুকি প্রদান করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এটি সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগ ও খরচে উৎপাদন করতে হয়। গুড়া দুধ আমদানিতে ট্যাক্স সমন্বয় অথবা খামারিদের ভর্তুকি প্রদান এর মাধ্যমে অসম প্রতিযোগিতা থেকে তাদের পরিত্রাণ দেয়া ছাড়া খামারিদের টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।

তারা বলেন, দুধ ও মাংসের দাম বেড়ে গেলে ভোক্তারা আমাদের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেন কিন্তু বিদ্যুৎ বিল থেকে শুরু করে গো-খাদ্য সবখানে আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। ডেইরি ও ফ্যাটেনিং শিল্প কৃষির আওতায় হলেও আমাদেরকে বাণিজ্যিক আকারে বিল প্রদান করতে হয়। গরুর ফার্মে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১১ থেকে ১৪.০০ টাকা; এটিকে কৃষি বিলের আওতায় ৫.৪০ টাকা ইউনিট করতে হবে।

ডিএফএফএ নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমাদের দেশের ফিডমিলগুলো শুল্কমুক্তভাবে গো খাদ্য উপাদান আমদানির সুযোগ পায়। কিন্তু বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করতে পারে না। তাদের প্রায় ২৫ পার্সেন্ট অধিক শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু আমাদের খামারিরা মূলত গো খাদ্য ক্রয় করে বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের কাছ থেকেই। সরাসরি অথবা খুচরা খাদ্যের দোকানের মাধ্যমে।

ফিড মিলারা এই বাড়তি প্রায় ২৫ পার্সেন্ট সুবিধা যা পাচ্ছে তা মূলত খামারীদের জন্য। কিন্তু তারা খামারিদের না দিয়ে অর্থাৎ সাশ্রয়ী মূল্যে গো খাদ্য বিক্রয় না করে বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের বাড়তি ট্যাক্সের টাকা হিসাব করে তাদের কস্ট প্রাইস হিসেবে বাড়তি দামে খাদ্য বিক্রি করে এতে খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়ছে।

বাংলাদেশে গো শিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে ভালো জেনেটিক্স এর অভাবকে দায়ী করে বলেন, ২০০৭ সালের সরকারি ব্রিডিং পলিসি তে যেখানে বলা ছিল পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রুভেন বুল তৈরি করতে হবে ও ১০ লক্ষ উন্নত জাতের হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান সিমেন্ট হয় সরকারিভাবে আমদানি হবে অথবা প্রাইভেট সেক্টর কে আমদানিতে উৎসাহ দেয়া হবে। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে দেখছি যে ১৭ বছর পার হওয়ার পরেও দেশে কোন প্রুভেন বল তৈরি হয় নাই এবং সর্বোমোট এক লক্ষ সিমেনও আমদানির অনুমতি দেওয়া হয় নাই। কেউ উন্নত জাতের সিমেন আমদানি করতে চাইলে সেখানে অকারণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। যা সরকারি নীতিমালার সম্পূর্ণ বিপরীত।

খামারীদের জন্য উন্নত জাতের প্রুভেন, ক্রস ব্রিড ও ভালো মানের আমদানিকৃত  দুধ, মাংস বা ডুয়েল পারপাস জাতের বুলের সিমেন সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করা ছাড়া দুধ ও মাংস উতপাদন বাড়ানো সম্ভব নয়।

তারা বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমরা বিজ্ঞান কে যুক্তিবিদ্যা দিয়ে অতিক্রম করতে চাই। বিজ্ঞান কখনোই যুক্তিবিদ্যা অনুযায়ী চলে না।  আমাদের দেশে ফ্রিসিয়ান, ফ্রিসিয়ান ক্রস, সাহিওয়াল ফ্রিসিয়ান ক্রস নিয়ে অনেক গবেষণা ও সাভার ডেইরি ফার্ম এর অবজারভেশন থাকার পরেও, আমাদের ব্রিডিং পলিসি যুক্তিবিদ্যার ওপর নির্ভর করে করা হয়েছে। এর সংশোধন জরুরী। এটা যতদিন সংশোধন না হয় আমরা কোন অবস্থাতেই ডেইরিতে উন্নতি করতে পারব না। আর ডেইরি মানে শুধু ডেইরি নয় ডেইরি সম্পূর্ণ আগে বা পরে মাংসের বাজারে আসে। ষাড়গুলো প্রথম বছরেই আর গাভীগুলো ৫/৭বছর পরে।

এ সময় তারা  এফ,এম,ডি ও এল,এস,ডি রোগ নির্মূলে সরকারিভাবে প্রজেক্ট এর মাধ্যমে  যতক্ষণ  মানসম্মত ভ্যাকসিন দেশে উত্পাদন না হয় ততক্ষণ খামারিদের আমদানি করে ফ্রি সরবরাহ করার দাবী করেন।

This post has already been read 210 times!

Check Also

ভ্যাকসিন তৈরিতে দেশের প্রতিভাবান বিজ্ঞানীদের এগিয়ে আসার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভ্যাকসিন তৈরিতে দেশের প্রতিভাবান বিজ্ঞানীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা …