কৃষিবিদ অঞ্জন মজুমদার : ডিম প্রোটিনের একটি বিকল্প পণ্য বা উৎস। ডিমের দাম বাড়লে ভোক্তা ডিম বাদ দিয়ে বিকল্প খুঁজে, হয় মাছের দিকে যায়, না হয় সব্জির দিকে অথবা সাময়িকভাবে ডিম কেনা বন্ধ রাখে বা কম কেনে।
চাল আটা, ডাল, মরিচ, তেল, লবণ, চিনি এগুলো নিত্যপণ্য -এগুলো এ বেলা না হলে ওবেলা লাগেই।
ডিম কেন রাজনৈতিক পণ্য হলো?
অজ্ঞতা আমি বলবো প্রথমেই দায়ি, দ্বিতীয়ত গুজব।
ডিম নিয়ে উম্মাদনা কেন সৃষ্টি হয়?
আসলে বর্তমানে স্যোলাল মিডিয়া নির্ভর আমাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড, মানুষ প্রতি ঘন্টায় নতুন নতুন ঘটনা দেখতে চায়, কায়েমি স্বার্থবাদী মহল মানুষ কে তাই দেখায় যা দেখে মানুষ প্রকৃত সমস্যা গুলো না দেখে ট্রেন্ডের পিছনে ব্যস্ত থাকে, মূলত ডিম এ কারনেই মিডিয়ার খোরাক হয়েছে।
ডিমের কারবারের সাথে তো অনেক দিন থেকে চেনা জানা, ডিমের চাহিদা সিজন অনুসারে কম বেশি হয়,যেমন শীতিকালে নতুন নতুন সব্জীর আগমনে মাছ ও ডিমের চাহিদা কমে, কারন ডিম একটি বিকল্প পণ, ডিমের পরিবর্তে মানুষের হাতে অনেক বিকল্প থাকে।
ডিমের সরবরাহ ব্যবস্থায় খামারিয়া সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে- যাঁরা ডিম কেনা বেচায় জড়িয় তাদের সমস্যা নাই, তারা মন চাইলে ডিম কিনবে না চাইলে কিনবে না। কারণ, তারা ডেইলি ট্রেড করে। খামারিদের ডিমের দাম বাড়া কমাতে তাদের কিছু যায় আসে না, তাদের প্রোফিট ফিক্স থাকে (প্রতি ডিমে খরচ বাদ দিয়ে তারা লাভ একই রাখে)।
ডিমের প্রধান বিকল্প মাছ, এ মুহুর্তে চাষের মাছ বিশেষত পাঙাশ তেলাপিয়ার দাম অনেক বেশি এবং ডিমের তুলনায় পুষ্টিগুন কম। যদি পুষ্টিগুন ও দাম দুটোই মূল্যায়ন করি তাহলে ডিমের দাম অনেক কম মাছের তুলনায়। ১ কেজি ডিমের দাম কত? ১ কেজি তেলাপিয়া বা পাঙাশের তুলনায় অনেক কম।
ডিম সর্বাত্মকভাবে ব্যালেন্স ফুড, ডিমের খোসা ছাড়া সব কিছুই খাওয়ার যোগ্য।
ফুড হেবিট (জিহ্বার স্বাদ) বলে একটা কথা আছে, যার যা রুচিতে যায়, সে তাই খাবে যদি তার ক্রয় ক্ষমতা থাকে।
সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বিকল্প পণ্য বিশেষত প্রোটিনের যোগান দাতা হিসাবে ডিমের প্রতি আগ্রহী করতে।
বর্তমান ডিমের বাজার নিন্মমুখী কারন সিজনাল সবজি আসা শুরু হয়েছে, অন্যদিকে আবহাওয়া শীতকালে বিশেষত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মুরগির জন্য অনুকূল আরামদায়ক থাকে, ফলে লেয়ার মুরগীর পরিবেশের ধকলের কারণে ডিম পাড়ায় ব্যাঘাত হয় না, অন্য সময়ের তুলনায় নরমালি ডিম উৎপাদন বেশি থাকে।
বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ব কমাতে পারলে যোগানের ঘাটতিতেও ডিমের দাম খুব বাড়বে না, খামারিদের দাম ঠিক করাতে হাত নাই, তারা সাপ্লাই চেইনের বিভিন্ন স্তরের স্টেকহোল্ডাদের কাছে জিম্মি।
উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে ডিমের যৌক্তিক দাম ঠিক করে কৃষি বিপনন অধিদপ্তর (কৃষি বিপনন আইন ২০১৮ ও কৃষি বিপনন নীতিমালা ২০২১ অনুসারে)
ডিম বিকল্প পণ্য, দাম বাড়লে মানুষ এমতিতেই কেনা কমিয়ে দিবে, কেনা কমলে দাম অটোমেটিক্যালি কমে যাবে, তার জন্য আহাজারি যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা বন্ধ করতে হবে। মিডিয়ার উম্মাদনা বন্ধ করতে হবে।
আর সরকার আরো গভীরে যান খামারিদের প্রকৃত করুন দশা দেখুন, আসলেই কি তারা লাভ করতে পারে। খামারিদের নিজের পুঁজি নাই ব্যাংক পোল্ট্রি ফার্মে বিশেষত প্রান্তিক খামারিদের লোন দিতে চায় না ঝুঁকি আছে ধুয়া তুলে অথচ কর্পোরেট কোম্পানি (পোল্ট্রি) জন্য তারা উদার হস্ত শত থেকে হাজার কোটি টাকা লোন তারা পোল্ট্রির জন্য ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বসে আছে, ঝুঁকি কি তাদের জন্য নাই?
আসলে পরিবেশ এমন ভাবে সৃষ্টি করা হচ্ছে যেন এই সেক্টর(পোল্ট্রি) থেকে প্রান্তিক খামারি বিতাড়িত হয়।
লেখক: পোল্ট্রি সাপ্লাই চেইন স্পেশালিষ্ট।।