বুধবার , ফেব্রুয়ারি ১২ ২০২৫

বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের জনকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ!

বিশেষ প্রতিনিধি: ষাটের দশকে, যখন বাংলাদেশ পুষ্টিহীনতার করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত, তখন জনাব ইকরাম হোসেন হয়ে উঠেছিলেন এক যুগান্তকারী পথিকৃৎ। ১৯৬৪ সনে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) গাজীপুরে ‘এগ এন্ড হেন্স’ নামে দেশে প্রথম বাণিজ্যিক পোলট্রি ফার্ম স্থাপন করেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে, চাল ও ডালের ওপর নির্ভরশীল বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে প্রোটিনের মারাত্মক অভাব রয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় তিনি যে সহজ অথচ বৈপ্লবিক সমাধান দেন, তা হলো—ডিম ও পোল্ট্রি খাতের প্রসার। তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপ শুধু পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করেনি, বরং বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এজন্যই তিনি পেয়েছেন “বাংলাদেশের পোল্ট্রির জনক” উপাধি।

আজ জনাব ইকরাম হোসেন এর উত্তরসূরিরা তার রেখে যাওয়া স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন, যা দৃঢ়সংকল্প ও উদ্ভাবনীর এক দীর্ঘ যাত্রার সাক্ষ্য বহন করে। যখন ইকরাম হোসেন প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে মুরগি উৎপাদনের উদ্যোগ নেন, তখন সাংস্কৃতিক সংশয় ও বাধার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। কিন্তু তিনি দমে যাননি। তিনি তার সমস্ত সম্পদ ও নিষ্ঠা দিয়ে এক নতুন খাত গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন, যা আজ দেশের মানুষের পুষ্টির চিত্র সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। সময়ের পরিক্রমায়, একসময়ের বিলাসিতা হিসেবে দেখা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য আজ সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের পাতে জায়গা করে নিয়েছে। ১৯৬০-এর দশকে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৩৭ বছর, যা আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২-তে—যার পেছনে পোল্ট্রি শিল্পের ব্যাপক প্রসারের বিরাট অবদান রয়েছে।

শুধু পুষ্টি ক্ষেত্রেই নয়, জনাব  ইকরাম হোসেনের এই উদ্যোগ দেশের অর্থনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের পোল্ট্রি খাত লক্ষাধিক মানুষের জীবিকার সংস্থান করছে, কৃষিখাতে উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করছে এবং সমাজের বহু মানুষকে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। তার সংগ্রামের গল্প প্রমাণ করে যে, একজন মানুষের সংকল্প ও পরিশ্রম কিভাবে গোটা জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।

আজ (৮ ফেব্রুয়ারি) ইকরাম হোসেনের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা তার অসামান্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। তার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে, আমরা তার রেখে যাওয়া আদর্শ ও কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করি। তার জীবন আমাদের শেখায়, সাহস ও সৃজনশীলতা দিয়ে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

আসুন, আমরা তার বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করি এবং কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি সেই মহান মানুষটিকে, যার অবদান আজও কোটি মানুষের জীবনকে পুষ্টি ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভরিয়ে রেখেছে।

This post has already been read 184 times!

Check Also

ডিম ও মুরগির উৎপাদন দ্বিগুন করাই মূল লক্ষ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিদিন জনসংখ্যা বাড়লেও কমছে আবাদি জমি। ২০৫০ সাল নাগাদ ডিম, দুধ, মাংসের চাহিদা …