বুধবার , ফেব্রুয়ারি ১২ ২০২৫

ওয়াপসা (WPSA) এবং বিশ্বব্যাপী পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে শতবর্ষের অবদান!

মো. খোরশেদ আলম জুয়েল : বিশ্বব্যাপী পোল্ট্রি বিজ্ঞান ও গবেষণার উন্নয়নে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছে ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন (WPSA)। যুক্তরাজ্যের এডওয়ার্ড ব্রাউন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রেমন্ড পার্ল-এর নেতৃত্বে এই সংগঠনটির সূচনা হয়। ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ, গবেষণা ও নতুন প্রযুক্তির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই WPSA বিশ্বব্যাপী পোল্ট্রি উৎপাদন, শিক্ষা ও গবেষণার প্রসারে কাজ করছে। এ পর্যন্ত ৮০টিরও বেশি দেশে এর শাখা রয়েছে, যেখানে গবেষক, শিক্ষাবিদ, খামারি এবং পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

প্রথম ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি কংগ্রেস এবং এর গুরুত্ব
১৯১৬ সালে WPSA-এর উদ্যোগে প্রথম ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি কংগ্রেস আয়োজনের পরিকল্পনা করা হলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯২১ সালে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে প্রথম ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে ২৩টি দেশের ৩৮৪ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। এরপর থেকে প্রতি চার বছর অন্তর এই কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, যা পরবর্তীকালে আরও প্রসারিত হয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পোল্ট্রি বিজ্ঞান সম্মেলনে পরিণত হয়েছে।

এই কংগ্রেসের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পোল্ট্রি বিজ্ঞানী ও গবেষকরা একত্রিত হয়ে নতুন প্রযুক্তি ও গবেষণালব্ধ ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন।

পোল্ট্রি বিজ্ঞান ও গবেষণার জ্ঞান বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে WPSA ১৯২৮ সনে “ইন্টারন্যাশনাল রিভিউ অফ পোল্ট্রি সায়েন্স” নামে একটি জার্নাল প্রকাশ শুরু করে, যা পরবর্তীতে “ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স জার্নাল” নামে পরিচিতি পায়। ১৯৪৫ সালে নতুন নামে পুনরায় প্রকাশ শুরু হয় এবং বর্তমানে এটি পোল্ট্রি বিজ্ঞান ও গবেষণার অন্যতম প্রধান প্রকাশনা হিসেবে স্বীকৃত।

পোল্ট্রি বিজ্ঞানের প্রচারে WPSA-এর অবদান
১৯২৮ সালে, পোল্ট্রি সংক্রান্ত গবেষণা ও প্রযুক্তিগত তথ্য আরও কার্যকরভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য WPSA “ইন্টারন্যাশনাল রিভিউ অফ পোল্ট্রি সায়েন্স” নামে একটি জার্নাল প্রকাশ শুরু করে। এটি ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ১৩টি খণ্ডে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে এটি “ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স জার্নাল” নামে পুনরায় চালু হয়।

এই জার্নালটি বর্তমানে তিন মাস অন্তর (ত্রৈমাসিক) প্রকাশিত হয় এবং এতে পোল্ট্রি উৎপাদন, খাদ্য, স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ, প্রজনন এবং পোল্ট্রি ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ গবেষণা ও অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়।

বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং বিশেষজ্ঞরা এই জার্নালে নিয়মিত গবেষণা প্রকাশ করেন, যা বিশ্বব্যাপী পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

বিশ্বজুড়ে শাখা গঠনের মাধ্যমে সম্প্রসারণ
১৯৪৬ সালে যুক্তরাজ্যের ড. ডব্লিউ.পি. ব্লান্ট WPSA-এর প্রথম জাতীয় শাখা গঠনের পরামর্শ দেন। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে WPSA-এর সদস্য সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য দেশেও এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়।

বর্তমানে বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে WPSA-এর শাখা রয়েছে এবং এর সদস্য সংখ্যা কয়েক হাজারের বেশি। এসব শাখা গবেষণা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, প্রশিক্ষণ এবং তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে WPSA-এর কার্যক্রম
বাংলাদেশে ১৯৯৭ সনে “ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ (WPSA-BB)” প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি দেশের পোল্ট্রি খাতের উন্নয়ন, গবেষণা, এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান বিনিময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ওয়াপসা-বিবি’র উদ্যোগেই প্রথমে বাংলাদেশে পোলট্রি মেলার আয়োজন করা হয়, যা বেশ কয়েকবছর ধরে আন্তর্জাতিক রুপ পেয়েছে।

বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের দ্রুত বিকাশের পেছনে WPSA-BB-এর অবদান অনস্বীকার্য। সংস্থাটি বিশ্বের উন্নত গবেষণা ও প্রযুক্তি সহজলভ্য করে দেশের খামারিদের আরও দক্ষ করে তুলছে। ওয়াপসা-বিবি নিয়মিতভাবে পোল্ট্রি বিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ, কর্মশালা এবং সম্মেলনের আয়োজন করে যা খামারি, গবেষক এবং শিক্ষাবিদদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পের টেকসই উন্নয়নে WPSA-BB-এর কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক গবেষণা, নতুন প্রযুক্তি এবং উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই খাত আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

WPSA শুধু একটি গবেষণা সংস্থা নয়, এটি পোল্ট্রি খাতের ভবিষ্যৎ গঠনে এক বিশাল ভূমিকা পালন করে চলেছে। গবেষণা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পোল্ট্রি খাতের উন্নয়নে ওয়াপসা-বিবি’র ভবিষ্যৎ কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

This post has already been read 48 times!

Check Also

ডিম ও মুরগির বাজার স্থিতিশীলতায় দরকার  “জাতীয় পোল্ট্রি বোর্ড” গঠন

কৃষিবিদ অঞ্জন মজুমদার : পোল্ট্রি শিল্পের সাথে আন্ত:মন্ত্রনালয়, আন্ত:অধিদপ্তর  এবং উৎপাদন ও বিপননে ডজনের উপরে …