এটা প্রতিবছরের গল্প; সেই ২০১৬ সাল থেকে দেখে আসছি দশ বছর ধরে প্রতিবার মানুষ আশায় বুক বাধে এবার বুঝি গরুর মাংসের দাম একটু কমলো। কিন্তু প্রতিবছর কুরবানীর পর সেই একই গল্প ঘুরে ফিরে আসে।
কোরবানি শেষ হবার পর ২ মাস মাংসের বাজার মন্দা যায়, মানুষের ঘরে ফ্রিজে মাংস মজুদ থাকে সে কারণে বাজারে যোগানের কিছুটা বাড়ন্ত থাকায় জীবন্ত গরুর দামও কিছুটা কম হয়। কুরবানী যে মাসে হয় চার মাস পর্যন্ত মোটামুটি একটা সস্তা দামে গরু ও মাংস বেচা কেনা হয়। এরপর শীতের সময় খাদ্যের ঘাটতির কারণে গরুর বাজার সবচেয়ে কম যায়।

শীত গেলে কৃষক খামারি আসছে কোরবানির জন্য আবার প্রস্তুতি নে বাজার থেকে কেনে।সেই সাথে প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশের বাংলাদেশের খামারিদের গরু পালনের অন্যতম খাদ্য উপাদান গমের ভুসি ও খড়ের দাম বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে অথচ বিশ্ববাজারে গম এবং ভূষির দাম সারা বছর কোনভাবেই টন প্রতি ১২০ ডলার থেকে ১৪০ ডলারের বেশি যায়না।
এই যে দুষ্টচক্র; এ থেকে বছরের পর বছর ধরে বেরিয়ে আসার কোন সুযোগই যেন নেই। অথচ এই দেশের আপামর প্রান্তিক মানুষ অন্তত ছুটির দিনে তার পাতে দুটুকরো গরুর মাংস খেতে চায়,খুব বড় বা বেশি চাওয়া নয়, সপ্তাহানতে জন প্রতি দুশ গ্রাম গরুর মাংস খাওয়ার ইচ্ছাটা নিশ্চয় অনেক বেশি নয়, কিন্ত প্রতিবছর কোরবানির ছমাস পর থেকে গরুর মাংসের দাম কেজিতে এক থেকে দেড়শ টাকা বেড়ে যাওয়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এর পিছনের ইতিহাস যদি খুঁজতে যা হয় তাহলে দেখা যাবে আজ থেকে ১৫ বছর আগে গরুর চামড়া এবং এর সাথে জড়িত শিল্পের মূল্যমান ছিল অত্যন্ত দামি ও গ্রহণযোগ্য মানের। খুব সুকৌশলে এই শিল্পকে রুগ্ন ও দুর্বল করার মাধ্যমে মানুষের আমিষের চাহিদার অন্যতম এই উপযোগ কে কঠিন করে তোলা হয়েছে নিম্ন মধ্যবিত্ত জন্য।যদিও এ থেকে উত্তরণকল্পে বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তারা বিগত ১৫ বছর ধরে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন ;সাইলেজ উৎপাদন করে, নিজস্ব শ্রম দিয়ে খামার করে এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে গরু প্রতিপালন করে।
কিন্তু এখানেও যেন কোনভাবেই দুর্ভাগ্য কাটছেনা, উদ্যোক্তারা যখন গরু পালন করে কুরবানী উপলক্ষে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেই মুহূর্তে প্রতিবছর রোজায় প্রচলিত বাজার মূল্যের চেয়ে কম টাকায় সামান্য কিছু মাংস ম্যাগাসিটিতে বিক্রি করে মানুষের সাথে এক ধরনের মশকরা করা হয় খোদ সরকারের পক্ষ থেকে তার নাকের ডগায় আর এর আড়ালে কি ঘটে তাতো ছাগল ও ব্রাহমা কান্ডে দেখেছে জনগণ। অথচ উচিত ছিল নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য সারা বছর স্বল্প মূল্যে মাংস সরবরাহের জন্য উদ্যোক্তাদের সাপোর্ট ও যোগান দেওয়া। এর পাশাপাশি কুরবানীর কিছুদিন আগে পার্শ্ববর্তী ভারত ও মায়ানমার থেকে অবৈধ উপায়ে গরু আনার মাধ্যমে এই দেশের শক্তিমান অদম্য সাহসী তরুণ উদ্যোক্তাদের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দেওয়া হয়। যার ফলশ্রুতিতে প্রতিবছর অসংখ্য স্বপ্নবাজ তরুণ উদ্যোক্তা ঝরে পড়েন ও ভক্তাদের ন্যায্য মূল্যে গরুর মাংস খাবার ইচ্ছেটা অধরা থেকে যায়। এ থেকে উত্তরণের জন্য বিপ্লব পরবর্তী ইন্টেরিয়িং গভঃমেন্ট ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার কাছে আবেদন গরু সেক্টরে চলমান বৈষম্য ও গোখাদ্য সিন্ডিকেটের কারসাজিকে নিয়ন্ত্রণে এনে ন্যায্যমূল্যে গরুর মাংস উৎপাদন বিপণনে উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিন ও ভোক্তাদের ন্যায্যমূল্যে মাংস খাবার ইচ্ছেকে পূরণ করার সুযোগ দিন। এই দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের সত্যিকার অর্থে সুযোগ ও সাপোর্ট দিলে তারা কি অসাধ্য পারে তা নিশ্চয়ই কারো অজানা নয়।
৯০% মুসলিম অধ্যুষিত মানুষের দেশে সপ্তাহে ন্যায্য মূল্য দুশ গ্রাম মাংস খেতে চাওয়া নিশ্চয়ই অনেক কঠিন বা অসাধ্য কোনো চাওয়া নয়।
লেখক : নাহিনুর রহমান, খামারি ও সাইলেজ উৎপাদক।