মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অনেক নাগরিক সস্তায় ডিম সংগ্রহ করতে মেক্সিকো ও কানাডা থেকে তা চোরাচালানের চেষ্টা করছেন। মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (CBP) জানিয়েছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত অবৈধ ডিম আমদানির ঘটনা গত বছরের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্যা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল (WSJ)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ডিম আমদানির ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে, কারণ যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া আনা ডিম বিভিন্ন রোগ ছড়াতে পারে। সিবিপি’র ল্যারেডো অফিস জানায়, টেক্সাস সীমান্তে এই ধরনের ডিম চোরাচালানের ঘটনা ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সান ডিয়েগোতে এটি দ্বিগুণ হয়েছে, আর এল পাসোতে জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৯০ জন ডিম চোরাচালান করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন।
ডিমের দাম কেন এত বেশি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারিতে সেখানে অসংখ্য মুরগি মারা গেছে, যা ডিম উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া, বাজারে সংকট তৈরি হওয়ায় অনেক ভোক্তা অতিরিক্ত ডিম কিনে মজুদ করছেন, যা দামের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ডজন উচ্চমানের ডিমের গড় দাম ছিল ৫.৯ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ২০২৩ সালে একই মানের ডিমের দাম ছিল ৩ ডলার প্রতি ডজন। কিছু শহরে এই দাম আরও বেশি, যেখানে প্রতি ডজন ডিম ১০ ডলার বা তারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, দ্যা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল -এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মেক্সিকোতে একই পরিমাণ ডিম মাত্র ২ ডলার থেকে ২.৩ ডলার দামে বিক্রি হচ্ছে। দুই দেশের দামের এই বিশাল ব্যবধানের কারণে অনেক মার্কিন নাগরিক কম দামে ডিম কিনতে মেক্সিকো থেকে অবৈধভাবে তা দেশে আনার চেষ্টা করছেন।
চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
তবে এক্ষেত্রে বসে নেই মার্কিন প্রশাসন। ডিম চোরাচালানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে মার্কিন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। প্রথমবার ধরা পড়লে ৩০০ ডলার জরিমানা করা হচ্ছে, যা প্রায় ৫০ ডজন মার্কিন ডিমের সমমূল্য। তবে যদি কেউ পুনরায় এই অপরাধ করেন, তাহলে আরও বড় শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন।
ডিমের অতিরিক্ত দামের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক প্রতিষ্ঠানও নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট চেইন ওয়াফল হাউস প্রতি ডিশে ব্যবহৃত প্রতি ডিমের জন্য ০.৫০ ডলার অতিরিক্ত চার্জ ধার্য করেছে।
সরকারি উদ্যোগ ও তদন্ত
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায়বিচার বিভাগ (Department of Justice) ডিমের মূল্য বৃদ্ধির কারণ তদন্ত শুরু করেছে। WSJ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা খতিয়ে দেখছে, বড় উৎপাদকরা ইচ্ছাকৃতভাবে মূল্য বৃদ্ধি বা সরবরাহ সংকট তৈরি করেছে কিনা।
এছাড়া, সেখানকার কৃষি বিভাগ ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে; যার মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে খামারগুলোর বায়োসিকিউরিটি ব্যবস্থা উন্নত করতে।
তবে সংকট মোকাবিলার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ডব্লিউএসজে-এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের সরবরাহ বাড়াতে অন্য দেশ থেকে আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রে ১৬,০০০ টন ডিম রপ্তানি শুরু করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংকট সমাধান করতে আরও সময় লাগতে পারে এবং এর প্রভাব সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বেশ কিছুদিন ধরে অনুভূত হবে।