চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম স্থিতিশীল ও নিম্নমুখী থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে হঠাৎ করেই লিটারপ্রতি ১৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে সয়াবিন তেলের দাম। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
এ বিষয়ে ক্যাব-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস. এম. নাজের হোসাইন আজ (১৬ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে বলেন, “বাজারব্যবস্থার সংস্কার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেট কাটার উৎসব থামানো যাবে না।”
বিবৃতিতে তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ভোজ্য তেলের উপর থেকে ভ্যাট সুবিধা প্রত্যাহার ও আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দেখিয়ে এক লাফে ১৮ টাকা মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন মিলারদের দাবিকে গ্রহণ করে ১ এপ্রিল থেকে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা এবং পাম তেলের দাম ১২ টাকা বাড়ানোর অনুমোদন দেয়।
ক্যাব সহ-সভাপতির অভিযোগ, “ট্যারিফ কমিশন আন্তর্জাতিক বাজার ও স্থানীয় ভ্যাট পরিস্থিতির অজুহাত দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করলেও বাস্তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দীর্ঘ সময় ধরে দাম স্থিতিশীল ও নিম্নমুখী। অথচ বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ব্যবসায়ীরা সরকারকে প্রভাবিত করে দাম বাড়িয়ে নেয়।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যবসায়ীরা রমজান মাসের আগেই সরবরাহ বন্ধ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর প্রেক্ষাপট তৈরি করে। এই সুযোগে তারা নিজেদের স্বার্থে জনস্বার্থকে জলাঞ্জলি দেয়। কর অব্যাহতির সময়ে মিলাররা সরকারের প্রায় ২০০০ কোটি টাকার রাজস্ব সুবিধা ভোগ করলেও সাধারণ ভোক্তারা তার এক টাকাও লাভ পাননি।”
বিবৃতিতে বাণিজ্য উপদেষ্টার একটি মন্তব্য নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। “যেখানে উপদেষ্টা বলেন সয়াবিনের দাম বাড়লেও পরিবারের ওপর প্রভাব পড়বে না, সেখানে বাস্তবতা হচ্ছে—সয়াবিন, চাল, পেঁয়াজ, ডিম, সবজিসহ প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ায় পরিবারের খরচ সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে।”
নাজের হোসাইন বলেন, “দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ একপক্ষীয় এবং অস্বচ্ছ। যদি মিলমালিক, আমদানিকারক, ভোক্তা ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দাম নির্ধারণ করা হতো, তবে এ ধরনের সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা আসত।”
তিনি অভিযোগ করেন, “সরকার বারবার ব্যবসায়ীদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করছে। একবার সয়াবিন, একবার পেঁয়াজ, একবার চিনি—এভাবে বছরের পর বছর অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নিচ্ছে।”
ক্যাব সহ-সভাপতি আরও বলেন, “করনীতির ক্ষেত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যকে করমুক্ত রাখতে হবে। পরোক্ষ করের পরিবর্তে প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেওয়া উচিত। অন্যথায় দরিদ্র মানুষের ওপর কর বৈষম্য আরও বাড়বে।”
শেষে তিনি বলেন, “কভিড পরবর্তী সময় থেকে কর্মসংস্থান ও আয় বাড়েনি, মূল্যস্ফীতি কমেনি। এই পরিস্থিতিতে সরকার যদি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।”