ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন, সুন্দরবন ও মৎস্য সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিকে আরো সুদৃঢ় করতে হবে। সুন্দরবনে অফুরন্ত সম্পদ রয়েছে, তা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিসহ এক শ্রেণীর মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ লোপাট করে আসছে। এই সব স্বার্থান্বেষীদের হাত থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি দেশের মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে।
সিটি মেয়র মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় নগরীর খালিশপুরস্থ নৌবাহিনী ঘাঁটি তিতুমীরের ফেয়ারওয়ে মাল্টিপারপাস হলে ‘‘সুনীল অর্থনীতির বিকাশে উপকূলীয় জনপদের ভূমিক“ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিটাইম রিচার্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিমরাড) এ সেমিনারের আয়োজন করে।
বিমরাড চেয়ারম্যান সাবেক নৌবাহিনী প্রধান এ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আয়োজিত সেমিনারে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নমুখী কর্মতৎপরতায় দেশ দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে খুলনায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। এখন উপকূলীয় এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র, বিমান বন্দর, শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সমৃদ্ধ জনপদে পরিণত হবে।
সাবেক নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সচেতনতা তৈরি, গবেষণা, উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, শিক্ষা প্রদান, মতবিনিময় এবং নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে সমুদ্র সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ‘বিমরা ‘ জাতির উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা পূরণ করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন বিমরাড ভবিষ্যতে বিশ্বের মেরিটাইম জনগোষ্ঠীর সেরা কেন্দ্রভূমি হয়ে উঠবে।
সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিনা আহমেদ, অধ্যাপক ড. মো. ওয়াছিউল ইসলাম, অধ্যাপক ড. নাজমুস সাদাত ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এ্যাওসেড-এর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফিন। অন্যান্যের মধ্যে বিমরাড-এর মহাপরিচালক কমডোর কাজী এমদাদুল হক, নৌ-অঞ্চল খুলনার কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মো. মোস্তাক সেমিনারে অংশ গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বিমরাড ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এতে দুই প্রতিষ্ঠানের মাঝে সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ ও বাংলাদেশের ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সংক্রান্ত গবেষণা ও সক্ষমতা তৈরিতে সহযোগিতা এবং যৌথ তৎপরতার বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে।
সেমিনারে অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুনীল অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরের অংশীজন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তাবৃন্দ, সমুদ্র বিষয়ক গবেষক, একাডেমিশিয়ান, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, ব্যবসায়ীগণ, উপকূলীয় ও বনাঞ্চলের প্রতিনিধিবর্গ, উদ্যোক্তা, উপকূলীয় সাংবাদিক এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ। এর আগে উপকূলীয় জনপদের সমস্যা বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় একটি সেবাধর্মী ও অলাভজনক সামুদ্রিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৮সালের ৩ জুলাই যাত্রা শুরু করে। দেশের সমুদ্র বিষয়ে দেশের তরুণ সমাজকে সচেতন এবং আকৃষ্ট করার পাশাপাশি সমুদ্র সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি এবং সুনীল অর্থনীতি (ব্লু-ইকোনমি), সমুদ্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তাসহ সামুদ্রিক সকল বিষয়ে গবেষণামূলক কারিগরি ও নীতিনির্ধারণী সুপারিশ প্রণয়ন প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য।